হাওজা নিউজ এজেন্সি: আনিসা খুয্আলী বলেন, “শহীদ সোলাইমানি দেখিয়েছেন যে, একজন মানুষ একই সঙ্গে সবচেয়ে জাতীয়তাবাদী এবং সবচেয়ে উম্মাহমুখী চরিত্র ধারণ করতে পারে।”
ইরান সরকারের নারী ও পরিবার বিষয়ক সহকারী আনিসা খুয্আলী কুম শহরের আদিয়ান ও মাজা’হেব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত “দ্বিতীয় ইমাম খোমেনীর (রহ.) বিশ্ব পুরস্কার প্রাক-সেশনে” বক্তৃতা দেন। তিনি দুইটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তুলে ধরেন, যা ইসলামী একতা এবং খোমেনীর (রহ.) চিন্তাধারার প্রভাব প্রকাশ করে।
প্রথম ঘটনায় তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে হজের সময় তিনি আব্দুল কারিম উবেইদকে দেখেছেন, যিনি প্রায় ২০ বছর ইসরায়েলের কারাগারে ছিলেন। উবেইদ জানান, ইসরায়েলি কর্মকর্তা ইসলামি মাযহাবগুলোর বিস্তারিত ফিকহী ভেদাভেদ জানতেন এবং তা কারাগারে বিভাজন সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করতেন। খুযালি বলেন, “শত্রু মুসলিম উম্মাহকে বিভাজিত করতে সবকিছু ব্যবহার করে।”
দ্বিতীয় ঘটনায় খুয্আলী লেবাননের ৩৩ দিনের যুদ্ধের পর একটি সম্মেলনের কথা স্মরণ করেন। সেখানে এক কমান্ডার উল্লেখ করেছিলেন, শত্রুরা কখনো কখনো মুসলমানদের না থাকা ভেদাভেদকেও বড় করে দেখাতে চায়।
খুয্আলী আরজ বলেন, “ঐতিহাসিক যুদ্ধের প্রমাণও আছে যে, শত্রুরা তাদের অনুসারীদেরকে নির্দেশ দিত যাতে মাযহাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিভাজন বড় করে দেখানো যায়।”
খুয্আলী খোমেনীর (রহ.) এবং সর্বোচ্চ নেতা (হাফি.)-এর একতার নীতি দুই দিকের: তাত্ত্বিক ও বাস্তবিক। তাত্ত্বিকভাবে একতার লক্ষ্য, লক্ষ্যগোষ্ঠী, পথ এবং চ্যালেঞ্জ নির্ধারিত, যা কৌশল নয় বরং একটি স্ট্র্যাটেজি। বাস্তবিক ক্ষেত্রে, একতার জন্য ইমামরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে শত্রুর প্রভাব মোকাবেলা, মুসলমানদের জন্য শক্তি ও মর্যাদা অর্জন, নতুন ইসলামী সভ্যতা প্রতিষ্ঠা এবং পবিত্র কুদসের রক্ষা।
খুয্আলী উল্লেখ করেন, খোমেনীর (রহ.) দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী কুদস হলো বিশ্বের মুসলমানদের প্রধান বিষয় এবং সর্বোচ্চ নেতা (হাফি.) এ বিষয়ে সবসময় জোর দিয়েছেন।
তিনি শহীদ সোলাইমানি ও অন্যান্য প্রতিরোধ নেতাদের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “জাতি ও উম্মাহর মধ্যে পারস্পরিক দায়িত্ব ও সেবা প্রমাণ করে যে, একজন ব্যক্তি উভয় স্তরে নেতৃত্ব দিতে পারে। ১২ দিনের যুদ্ধেও আমরা দেখেছি কিভাবে ঈশ্বরের সহায়তায় বিরল হৃদয়সংযোগ সৃষ্টি হয়।”
খুয্আলী আরও যোগ করেন, “আল্লাহর ওপর আস্থা এবং নেতৃত্বের নির্দেশ অনুসরণ করলে, আমরা সেই দিন দেখব যখন ইমাম খোমেনীর (রহ.) প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আল-আকসায় মুসলিমদের এক্যবদ্ধ নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি ইমাম খোমেনীর (রহ.) এবং সর্বোচ্চ নেতার (হাফি.) ফতোয়াগুলোও তুলে ধরেন, যা একতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ইমাম খোমেনী (রহ.) একতার জন্য সুন্নী সম্প্রদায়ের সঙ্গে নামাজ পড়াকে বৈধ মনে করতেন। সর্বোচ্চ নেতা (হাফি.) বলেছেন, অন্য মাযহাবের সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা করা হারাম এবং শিয়া ও সুন্নীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।
খুয্আলী কেবল বিভাজন কমানোর নয়, বরং মুসলিমদের মধ্যে সাধারণ দিকগুলোকে উজ্জ্বল করার ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ নেতা বারংবার “ব্রিটিশ শিয়া ও মার্কিন সুন্নি” তৈরীর মাধ্যমে শত্রুদের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন, যা মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চায়।
শেষে খুয্আলী জাতি ও উম্মাহর মধ্যে সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করে বলেন, “আমরা অবশ্যই ইরান ও মুসলিম উম্মাহর পারস্পরিক সেবা ও ত্যাগকে তুলে ধরব। শহীদ কাসেম সোলাইমানি এমন একজন নিখুঁত উদাহরণ যে, একজন ব্যক্তি উভয় স্তরে নেতৃত্ব দিতে পারে। ১২ দিনের যুদ্ধেও আমরা ঈশ্বরের রহমতে বিরল হৃদয়সংযোগ দেখেছি।”
তিনি বক্তৃতার শেষে পুনরাবৃত্তি করে বলেন, “আল্লাহর ওপর আস্থা এবং রাহবার নির্দেশ অনুসরণ করলে, সেই দিন বেশি দূরে নয়, যখন ইমাম খোমেনীর (রহ.) প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আল-আকসায় মুসলিমদের এক্যবদ্ধ নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।”
আপনার কমেন্ট